
মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন:
পেকুয়া উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে এক অপ্রাপ্ত বয়সী গৃহবধূকে পিঠিয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে স্বামী ও শাশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় জড়িত পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে গেছে। হত্যাকান্ডের শিকার কিশোরীর নাম মোছাম্মৎ সালমা বেগম (১৪)। সে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পন্ডিত পাড়া গ্রামের বাদশার কন্যা।
স্থানীয়রা জানান, গত তিন মাস পূর্বে কাবিননামা ছাড়াই পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের জাফর অলমের পুত্র, বহু মামলার আসামী বনদস্যু আলমগীরের সাথে বিয়ে হয় সালমা বেগমের। অপ্রাপ্ত বসয়ী হলেও সালমার মা-বাবা টাকা ও সম্পত্তির লোভে বনদস্যু আলমগীরকে কাবিননামা ছাড়াই তাদের মেয়েকে বিয়ে দেন।
বনদস্যু আলমগীরের প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের পর থেকে আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন প্রায় সময় কারণে-অকারণে কিশোরী সালমাকে মারধর করত। আলমগীরের ভাই বনদস্যু জাহাঙ্গীর ও পিতা জাফর আলমসহ পরিবারের সদ্যসরা গত ২০ সেপ্টেম্বর যৌতুকের দাবিতে সকালে ও রাতে সালমাকে কয়েক দফা হাত-পা রঁিশ দিয়ে বেঁধে লোহার রড ও কাঠের বাটাম দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায় আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন। উপর্যপুরি নির্যাতনে সালমা এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে গোপনে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান আলমগীর, জাহাঙ্গীর ও তাদের পিতা জাফর আলম। সেখানে সালমার অবস্থার অবনতি হলে চমেকে রেফার করেন চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এদিকে চমেকে ভর্তির ৩ দিন পর আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিশোরী সালমা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কিশোরী সালমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ চমেক হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যায়। অপরদিকে চমেক হাসপাতাল এলাকা থেকে ঘাতক স্বামী ও বহু মামলার আসামী বনদস্যু আলমগীরকে আটক করেছে সিএমপির পাঁচলাইশ থানার একদল পুলিশ। বর্তমানে বনদস্যু আলমগীর পাচলাইশ থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তাকে পেকুয়া থানায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।
বারবাকিয়া ইউনিনের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত ৭/৮ বছল ধরে উপজেলার পাহাড়ি দুই ইউনিয়ন টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ে ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করেছে স্থানীয় ডাকাত জাফর আলমের দুই পুত্র বনদস্যু খ্যাত ডাকাত জাহাঙ্গীর আলম ও আলমগীর। আলমগীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোরী মেয়েদের রাতের আঁধারে অপহরণ করে এনে তার আস্তানায় আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। কাবিননামা ছাড়াই এ পর্যন্ত প্রায় ৭/৮টি বিয়ে করেছে আলমগীর। সর্বশেষ তার বলি হলো সালমা নামের এক হতভাগী কিশোরী।
উল্লেখ্য, গত ২৭/৭/২০২০ ইরেজী তারিখ বিকালে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আনসার উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হামলাও চালিয়েছিল বনদস্যু ওই দুই সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর আলম ও আলমগীরের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীরা এসয়ম চবির মেধাবী ছাত্র আনসার মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে উপর্যপুরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। বর্তমানে আনসার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হতাভাগী কিশোরীর পরিবার এ ঘটনায় পেকুয়া থানায় বনদস্যু আলমগীর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পেকুয়া থানার ডিউটি অফিসার এসআই নুরুন নবী জানান, পাচলাইশ থানা পুলিশ বনদস্যু আলমগীর আটক মর্মে পেকুয়া থানাকে জানানো হয়েছে। নিহত সালমার পরিবার অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে পাচলাইশ থানাকে অবহিত করার পর আসামীকে পেকুয়া থানায় হস্তান্তর করবে পাচলাইশ থানা পুলিশ।