
– ছাত্রনেতা থেকে জননেতা। যেটা সবাই হয়না, পারেওনা। ওনি পেরেছিলেন নিজ গুনে। জমিদারের ছেলে হয়েও আপামর শ্রেণীর জনতার সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যেতে পারাটায় যেন তাঁর চিরাচরিত অভ্যাস এবং তাঁর প্রধান গুণ। পেকুয়ার জনগণ ২০০৯ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে তাদের অবহেলিত জনপদের ভাগ্য উন্নয়ন এবং তৎকালীন সফল যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের অসমাপ্ত উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নের প্রতিদান দিতে গিয়ে আধুনিক পেকুয়া গড়তে একের পর এক উন্নয়নকর্ম সাধন করেন। চাহিদা অনুযায়ী সীমিত বরাদ্দের মধ্যেও সাত ইউনিয়নে সমন্বয় করে কাজগুলো ভাগ করে নিতেন।
পাঁচবছর ক্ষমতা শেষ হওয়ার পর আবারো দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে পেকুয়ার জনগনের রাজুতেই আস্থা। বিপুলসংখ্যক ভোটে ২য় বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১০বছর ক্ষমতায় থাকার পর মার্চের ২৪তারিখ চতুর্থধাপে অনুষ্ঠিত ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। এতে আশাহত পেকুয়ার জনগন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের হতাশা, অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
দশবছর ক্ষমতায় থাকার পর একজন সৎ, নির্লোভ, ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসেবেই পেকুয়ার জনগনের কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রচলিত আছে তিনি একজন শিক্ষাবান্ধব এবং ক্রীড়াবান্ধব চেয়ারম্যান ছিলেন। এমন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং খেলার টুর্নামেন্ট নেই যেখানে ওনার বিচরণ ছিলনা।
সাংবাদিক সমাজ, পেশাজীবি মানুষদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক দলমত নির্বিশেষে আধুনিক পেকুয়া গড়তে ওনি বদ্ধপরিকর ছিলেন।
যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান, জানাজা তাঁর সরব উপস্থিতির কারণে জনগণের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন। উপজেলার একজন সর্বোচ্চ ব্যক্তি হয়েও লবণ চাষী, কৃষকদের সাথে তার দারুণ সখ্যতা যেকোন মানুষকেই অনুপ্রাণিত করবে।
আধুনিক পেকুয়া গড়তে যে নিরলস পরিশ্রম এবং পেকুয়ার মানুষের প্রতি যে অগাধ ভালবাসা তা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। দলমত নির্বিশেষে একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যানের এমন বিদায় নিঃসন্দেহে ভবিষ্যত পেকুয়ার জন্য কষ্টকর।
একটি জায়গায় ১০টি বছর!! বিদায় বলাটা কষ্টকর। বিদায় মানে প্রস্থান নয়। বিদায় মানে নতুন যাত্রায় নিজেকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
শুকনো পাতা প্রাকৃতিকভাবেই বিদায় নেয় নতুন কিশলয়কে জায়গা করে দিতে। আবার সেই নতুন পাতাও এক সময় বিবর্ণ হয়, শুকিয়ে যায়, ঝরে পড়ে। তাই বিদায় মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। একটা বিদায় হয়তো আরেকটি নতুন কিছুকে প্রতিস্থাপন করার জন্যই প্রয়োজন । বিদায়ের দায় একটাই। সেটা হলো জায়গা ছেড়ে দেওয়া। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। পেছনে কারো জলে ভরা চক্ষু থাকবেই। নিজের চোখও হয়তো ছল ছল করবে জলে; পা সরবে না সামনে, তবু যেতে হবে। কারণ বিদায় চিরন্তন, বিদায়-ই মৌলিক, সম্ভবত।
শাফায়েত আজিজ রাজু আপনার আগামীর জন্য শুভ কামনা।
লেখক-
তানজিমুল ইসলাম জিসাদ
শিক্ষার্থী।